আরাকান আর্মির নতুন ঘোষণার ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এক রকম ঝুলে গেছে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গারা পড়েছে উভয় সংকটে।
এমনিতে মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে প্রত্যাবাসন নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছে রোহিঙ্গারা। উলটো এখন আরাকান আর্মি তাদের ওয়েবসাইটে সাফ জানিয়ে দিয়েছে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে অর্থাৎ রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবর্তন করতে হলে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকারকে আরাকান আর্মির সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এর বাইরে কোনো প্রত্যাবাসন হবে না।
গত ৩ মাস ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ চলছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তেও। প্রতিদিন গোলাগুলির কারণে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন সীমান্তের বাসিন্দারা।
- আসলে মিয়ানমারের পাশাপাশি আরাকান আর্মি বাংলাদেশকে ফাঁদে ফেলে এর সুবিধা আদায় করতে চায় -অভিমত বিশ্লেষকদের
রোহিঙ্গা নেতা বলছেন, আরাকান আর্মির এ ঘোষণার ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও কঠিন হবে এবং উভয় সংকটে পড়বে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও। একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থাও।
রোহিঙ্গাদের সূত্র বলছে, রাখাইন রাজ্য এখন প্রায় আরাকান আর্মির দখলে চলে গেছে। এ কারণে তাদের অমতের বাইরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা কঠিন হবে।
এ বিষয়ে রোহিঙ্গা নেতা হামিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমার যেমন রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করেনি, তেমনি আরাকান আর্মিও গ্রহণ করবে না। এতে রোহিঙ্গা সংকট আরও দীর্ঘস্থায়ী ও কঠিন হয়ে পড়বে। যার ফল ভোগ করতে হবে বাংলাদেশকে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব. মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের শেষ হবে এমন বলাটা খুব কঠিন। অনুমান করা যায়, দিনকে দিন পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে। যার ফলভোগ করতে হবে মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশকে।’ আরাকান আর্মির ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে মিয়ানমারের পাশাপাশি আরাকান আর্মি বাংলাদেশকে ফাঁদে ফেলে এর সুবিধা আদায় করতে চায়।
এ কারণে তারা হয়তো প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলছে।’ ক্যাম্পের চলমান সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে মেজর অব. এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মনে হয় মিয়ানমার সরকারই রোহিঙ্গাদের কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে উসকে দিয়ে ও সহযোগিতা করে ক্যাম্পে খুনাখুনি বা সন্ত্রাসবাদ করছে। কারণ তারা বিশ্বাবাসীকে দেখাতে চায় রোহিঙ্গারা সন্ত্রাসী। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রাও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এবং মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে করে স্থানীয়রা ধীরে ধীরে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসবাদ থেকে চিরতরে মুক্তির একমাত্র সমাধান হচ্ছে প্রত্যাবাসন। তবে এই মুহূর্তে দ্রুত প্রত্যাবাসন খুব দুরূহ ব্যাপার। এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করার তাগিদ দেন তিনি।
প্রত্যাবাসন কি আরও কঠিন হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকার চায় রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হোক এবং সুন্দরভাবে শেষ হোক। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা রোহিঙ্গাদের প্রস্তুত করাসহ ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখছি।’
স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিয়েও কাজ করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে এপিবিএন পুলিশের তিনটি ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি নিয়ে কাজ করছি।’
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে এম আবদুল মোমেন বলেন, ‘কে কি বলছে তা নিয়ে আমরা মাথাব্যথা করছি না। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে রোহিঙ্গাদের এ দেশ থেকে দ্রুত বিদায় করা, প্রত্যবাসন করা। এ জন্য বাংলাদেশ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীও সম্প্রতি জাতিসংঘসহ বিশ্ব নেতাদের কাছে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছেন। আমরা আশাবাদী’।
রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক এডিআইজি হাসান বারী নুর যুগান্তরকে বলেন, ‘ক্যাম্পে যারা অস্ত্রবাজী, খুনাখুনি, মাদকের কারবার ও বিশৃঙ্খলার করার চেষ্টা করবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পে জোড়া হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পে নিপরাত্তা জোরদার করা করাসহ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ও ক্যাম্পের বাইরে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে নির্মূল করার জন্য কাজ করছে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা সংস্থাগুলো। সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের আইনের আওয়াতা আনা হচ্ছে।’ তিনি জানান, স্থানীয়দের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সামনে চলমান অভিযান আরও বেশি জোরালো হবে। সুত্র: যুগান্তর
পাঠকের মতামত